Translation is not possible.
ফজরের আজানের ঠিক আগমুহূর্তে ঘুমটা ভেঙে গেল। মোবাইলের অ্যালার্ম বাজার আগেই। গত কয়েকদিন ধরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে। আগে অ্যালার্মের শব্দে বিরক্তি লাগত, মনে হতো আরেকটু ঘুমাই। কিন্তু এখন মনে হয়, এই অ্যালার্মটা আসলে কোনো যান্ত্রিক শব্দ নয়, এটা ইসরাফিলের শিঙার মতো আমাকে সতর্ক করছে—"ওঠো! সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তোমার আমলনামা এখনো বড্ড হালকা।"
 
লেপ সরিয়ে উঠে বসলাম। মাঘের শেষ দিকের শীতটা বেশ কামড় বসিয়েছে। জানালার কাঁচ ঝাপসা। আমি আঙুল দিয়ে কাঁচের ওপর একটা দাগ কাটলাম। বাইরেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু এই অন্ধকারের বুক চিরেই তো আলো আসে। আমাদের উম্মাহর অবস্থা এখন ঠিক এই অন্ধকারের মতো। আমরা অপেক্ষা করছি একটা ভোরের। কিন্তু ভোর তো এমনিতে আসে না, সূর্যকে যেমন জ্বলে-পুড়ে উঠতে হয়, তেমনি বিজয়ের ভোর আনতে হলে উম্মাহর প্রতিটি যুবককে ঈমানের আগুনে জ্বলে উঠতে হয়।
 
ওজু করতে গিয়ে পানির স্পর্শে শরীরটা শিউরে উঠল। এই কনকনে ঠান্ডায় ওজু করাটা একটা জিহাদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না, যাতে আল্লাহ পাপ মোচন করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন?" সাহাবীরা বললেন, "অবশ্যই, ইয়া রাসুলাল্লাহ!" তিনি বললেন, "কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওজু করা..."
 
মসজিদে যাওয়ার পথে আজ কুয়াশা খুব ঘন। হাত দেড়েক সামনের কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমার মনে হলো, আমরা দুনিয়ার জীবনেও তো এমন কুয়াশায় আটকা পড়ে আছি। আমরা ভবিষ্যৎ জানি না, আমরা গন্তব্য স্পষ্ট দেখি না। শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা (তাওয়াক্কুল) করে পা ফেলি। এই যে আমি হাঁটছি, আমি জানি না সামনের গর্তে পড়ব কি না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি—মসজিদের মিনার থেকে যে 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' (এসো কল্যাণের দিকে) ডাক আসছে, সেই ডাক আমাকে পথ দেখাবে।
 
মসজিদে আজ মুসল্লি কিছুটা বেড়েছে। আমি প্রথম কাতারে জায়গা পেলাম। আমার ডান পাশে তানভীর। ও আমার আগেই এসেছে। ওর পরনে সেই লেদার জ্যাকেটটা নেই, সাধারণ একটা সোয়েটার। কিন্তু ওর চেহারায় যে নূর বা দ্যুতি দেখতে পাচ্ছি, তা কোনো দামী জ্যাকেট দিতে পারে না। সেজদায় গিয়ে ও যখন ফুপিয়ে উঠল, তখন আমার মনে হলো—এই চোখের পানিই তো সেই অস্ত্র, যা পরমাণু বোমার চেয়েও শক্তিশালী। আমরা এই অস্ত্রটা ব্যবহার করতে ভুলে গেছি।
 
নামাজ শেষে ইমাম সাহেব আজ সূরা আল-ইমরানের একটা আয়াত শোনালেন।
 
"তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও।"
 
আয়াতটা শোনার পর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। আল্লাহ শর্ত দিয়েছেন—"যদি তোমরা মুমিন হও"। আমরা কি আসলেই মুমিন হতে পেরেছি? নাকি আমরা শুধু জন্মসূত্রে মুসলিম? আইডি কার্ডে ধর্ম 'ইসলাম', কিন্তু জীবনাচরণে 'বস্তুবাদ'। আমাদের বিজয় আটকে আছে আমাদের ঈমানের দুর্বলতার কারণে। গাজা মার খাচ্ছে না, মার খাচ্ছি আমরা। আমাদের গাফিলতি মার খাচ্ছে।
 
মসজিদ থেকে বেরিয়ে আমরা তিনজন—আমি, তানভীর আর সাকিব—চা খেতে দাঁড়ালাম। টং দোকানের চা। মাটির কাপ। ধোঁয়া উঠছে।
 
সাকিব বলল, "ভাই, কাল রাতে একটা নিউজ দেখলাম। গাজায় নাকি এখন পশু খাদ্য দিয়ে রুটি বানাচ্ছে। আর আমরা কাল রাতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে মেনু কার্ড দেখে কনফিউজড ছিলাম—বিরিয়ানি খাব নাকি নান-গ্রিল। আমার গলার নিচে খাবার নামছিল না।"
 
তানভীর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, "শুধু আফসোস করে লাভ নেই। আমাদের 'প্রজেক্ট রুহানিয়া'র ফান্ডে গত সপ্তাহে ভালো টাকা জমেছে। অফিসের অনেকেই এখন টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে দিচ্ছে। রিফাত তো ওর বাইকটা বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছে। ও নাকি পাবলিক বাসে যাতায়াত করবে।"
 
আমি চমকে উঠলাম। "রিফাত বাইক বিক্রি করবে? ও তো বাইক ছাড়া এক কদমও নড়ে না!"
 
"ও বলেছে, 'গাজার মানুষ যদি মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে বর্ডার পার হতে পারে, আমি কি বাসে চড়তে পারব না? আমার বাইকের তেলের টাকাটা যদি কোনো বাচ্চার দুধের জন্য কাজে লাগে, সেটাই লাভ'।"
 
সুবহানাল্লাহ! হিদায়াত কার দিলে কখন কীভাবে আসে, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। আমরা মানুষকে জাজ করি, কিন্তু আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন। রিফাতকে আমরা 'মডার্ন' বলে অবজ্ঞা করতাম, আর আজ সে ত্যাগের এমন নজির স্থাপন করছে যা আমাদের লজ্জা দেয়।
 
সকাল দশটা। অফিস। কাজের চাপ প্রচুর। কিন্তু এর মধ্যেই আমাদের দাওয়াহর কাজ চলছে। তবে বাধা আসবেই। এটাই নিয়ম। লাঞ্চ আওয়ারে আমাদের বস, মি. চৌধুরী আমাকে কেবিনে ডাকলেন। তিনি বেশ রাগী মানুষ। ধর্ম-কর্মের ধার ধারেন না।
 
"শুনলাম তোমরা নাকি অফিসে একটা গ্রুপ করেছ? লাঞ্চ টাইমে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করো? ফান্ড কালেকশন করছ?" চৌধুরী সাহেব চশমার ফাঁক দিয়ে তাকালেন।
 
আমি বিনীতভাবে বললাম, "স্যার, আমরা লাঞ্চ টাইমে আড্ডা না দিয়ে একটু পড়াশোনা করি। নিজেদের নৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কথা বলি। আর ফান্ডটা আমরা স্বেচ্ছায় দিচ্ছি, গরিবদের শীতবস্ত্র দেওয়ার জন্য।"
 
"লিসেন, অফিস হলো কাজের জায়গা। এখানে ওসব মোল্লাতন্ত্র চলবে না। ফান্ড রেইজিং বন্ধ করো। আর লাঞ্চ টাইমে এসব মিটিং ফিসফিসানি—এগুলো পরিবেশ নষ্ট করে। বি প্রফেশনাল।"
 
আমার বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠল। ইচ্ছে হলো মুখের ওপর বলে দিই—স্যার, এই প্রফেশনালিজম কি আমাদের কবরে বাঁচাবে? কিন্তু আমি নিজেকে সামলালাম। মুসা (আ.)-কে আল্লাহ ফেরাউনের কাছে পাঠানোর সময় বলেছিলেন—"তার সাথে নরম ভাষায় কথা বলো।"
 
আমি শান্তভাবে বললাম, "স্যার, আমরা অফিসের কোনো রুলস ব্রেক করছি না। আমরা কাজের সময়ে কাজই করি। বরং এই আলোচনার ফলে আমাদের কলিগদের সততা বেড়েছে, কাজের প্রতি ফোকাস বেড়েছে। আপনি চাইলে একদিন আমাদের সাথে বসতে পারেন। আর ফান্ডটা সম্পূর্ণ মানবিক। মানবতার সেবা করা কি আনপ্রফেশনাল?"
 
চৌধুরী সাহেব চুপ করে রইলেন। তিনি হয়তো আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছিলেন না। সত্যের একটা তেজ আছে। তিনি ফাইলটা বন্ধ করে বললেন, "আচ্ছা, যাও। তবে কাজের যেন ক্ষতি না হয়।"
 
কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম। এটা একটা ছোট বিজয়। শয়তান চেয়েছিল আমাকে রাগিয়ে দিতে, কিন্তু সবর বা ধৈর্যের ঢাল আমাকে বাঁচিয়ে দিল।
 
বিকেলে তানভীর আর আমি গেলাম শহরের এক বস্তিতে। আমাদের 'প্রজেক্ট রুহানিয়া'র প্রথম কার্যক্রম। আমরা কোনো দামী কম্বল কিনিনি। আমরা কিনেছি মোটা কাপড়ের চাদর আর সোয়েটার। কম টাকায় বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য।
 
বস্তির সরু গলি। নর্দমার গন্ধ। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। এখানেই মানুষ থাকে। এদের দেখলেই বোঝা যায়, দুনিয়াটা আসলে কত তুচ্ছ। আমরা এসি রুমে বসে ডিপ্রেশনে ভুগি, আর এরা পলিথিনের ছাদের নিচে হাসিমুখে দিন পার করে।
এক বৃদ্ধা মহিলাকে চাদরটা দিতেই তিনি আমার হাত ধরে কেঁদে ফেললেন। "বাবা, আল্লাহ তোমারে বাঁচায়ে রাখুক। তিন দিন ধইরা শীতে ঠকঠক কইরা কাঁপতাছি। কেউ ফিরেও চায় না।"
 
আমি তার হাতটা ধরলাম। খসখসে চামড়া। ঠিক যেন আমার দাদির হাত। আমি বললাম, "খালাম্মা, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর দোয়া করবেন ফিলিস্তিনের মানুষগুলোর জন্য। তাদের অবস্থা আপনাদের চেয়েও খারাপ।"
 
তিনি আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন। "টিভিতে দেখি বাবা। ওই বাচ্চাগুলার লাইগা কলিজাটা ফাইটা যায়। আমি তো গরিব, টাকা দিতে পারি না। কিন্তু প্রতি ওয়াক্ত নামাজে হাত তুইলা ওদের লাইগা বদদোয়া করি—যারা ওদের মারতাছে, আল্লাহ যেন ওদের ধ্বংস করে।"
 
এই বৃদ্ধার দোয়া! আরশ কাঁপানো দোয়া। এই দোয়াই তো ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে অকেজো করে দেবে ইনশাআল্লাহ। আমরা মনে করি টাকা আর অস্ত্রই শক্তি। কিন্তু মজলুমের দোয়া যে কত বড় শক্তি, তা আমরা ভুলে যাই।
 
কাজ শেষে যখন ফিরছি, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মাগরিবের আজান দিচ্ছে। আমরা রাস্তার ধারের এক ছোট মসজিদে নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে তানভীর বলল, "দোস্ত, একটা অদ্ভুত শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে একটা পাথর নেমে গেছে। এই যে দেওয়া, এই যে মানুষের হাসি দেখা—এর চেয়ে বড় নেশা আর কিছু নেই।"
 
বাসায় ফিরতেই দেখি রাফিয়া সোফায় বসে আছে। চোখমুখ লাল। কাঁদছে।
 
"কী হয়েছে রে?" আমি কাছে গিয়ে বসলাম।
 
রাফিয়া চোখ মুছে বলল, "ভাইয়া, আজ ভার্সিটিতে প্রেজেন্টেশন ছিল। আমি হিজাব পরে গিয়েছিলাম। আমার ফ্রেন্ডরা... ওরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। একজন বলল, 'কিরে, তুই তো খ্যাত হয়ে গেছিস। এটা কি আফগানিস্তান পেয়েছিস?' ম্যামও আমাকে বললেন, 'নেক্সট টাইমে স্মার্ট হয়ে আসবে'।"
 
আমার রক্ত গরম হয়ে গেল। কিন্তু আমি নিজেকে শান্ত রাখলাম। রাফিয়ার মাথায় হাত রাখলাম।
 
"শোন বোন, হীরা যখন কয়লার খনিতে থাকে, তখন কয়লাগুলো হীরাকে দেখে হাসে। তারা ভাবে হীরাটা কালো হয়ে গেছে। কিন্তু জহুরি জানে হীরার দাম কত। তুই হীরা। ওরা কয়লা। ওদের কথায় তোর দাম কমবে না।"
 
"কিন্তু ভাইয়া, খারাপ লাগে। আমি তো ওদের মতোই ছিলাম। হঠাৎ করে আমি 'অন্যরকম' হয়ে গেলাম কেন?"
 
"কারণ তুই 'গুরাবা' বা অপরিচিতদের দলে নাম লিখিয়েছিস। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'ইসলাম শুরু হয়েছিল অপরিচিত অবস্থায়, এবং অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। তাই সুসংবাদ সেই অপরিচিতদের জন্য।' ওরা তোকে আনস্মার্ট বলবে, খ্যাত বলবে। কিন্তু আল্লাহ তোকে বলবেন—'আমার বান্দী'। কোনটা তোর চাই? ওদের বাহবা, নাকি আল্লাহর সন্তুষ্টি?"
 
রাফিয়া আমার দিকে তাকাল। ওর চোখের পানি তখনো শুকায়নি, কিন্তু দৃষ্টিতে দৃঢ়তা ফিরে এসেছে। "আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই ভাইয়া। ওরা যা ইচ্ছা বলুক। আমি আর হিজাব খুলব না। ফিলিস্তিনের মেয়েরা যদি বোমার মুখে হিজাব ধরে রাখতে পারে, আমি সামান্য টিটকারির ভয়ে হিজাব ছাড়ব?"
 
"সাবাস বোন! এটাই তো রুহানিয়া। এটাই তো আধ্যাত্মিক শক্তি। তুই আজ জিতে গেছিস।"
 
রাতে খাওয়ার টেবিলে মা বললেন, "আজ রান্না ভালো হয়নি। তরকারিতে লবণ কম হয়েছে।"
 
আমি বললাম, "মা, আলহামদুলিল্লাহ। গাজার মানুষ আজ হয়তো শুধুই পানি খেয়ে আছে। লবণের স্বাদ পাওয়ার ভাগ্যও তাদের নেই। আমাদের এই খাবার তো রাজকীয়।"
 
বাবা চুপচাপ খাচ্ছিলেন। তিনি সাধারণত কথা কম বলেন। হঠাৎ তিনি বললেন, "আমি ঠিক করেছি, আমাদের গ্রামের বাড়ির জমির কিছু অংশ বিক্রি করে দেব। ওই টাকাটা আমি ফিলিস্তিন ফাণ্ডে দিতে চাই। আমার আর কতদিন? কিন্তু ওই টাকাটা যদি আখেরাতের ব্যাংকে জমা থাকে, তবে সেটাই লাভ।"
 
আমি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম। এই মানুষটা সারাজীবন কত কষ্ট করে জমিটুকু আগলে রেখেছেন। আর আজ এক মুহূর্তের সিদ্ধান্তে সব দিয়ে দিতে চাইছেন!
 
আসলে ঈমানের স্বাদ যখন কেউ পেয়ে যায়, তখন দুনিয়ার মোহ তার কাছে মাকড়সার জালের মতো ঠুনকো মনে হয়।
 
রাতে শুতে যাওয়ার আগে ডায়েরিটা খুললাম। একটা কথা মনে পড়ল—"সূর্য ডোবার পর অন্ধকার আসবেই, কিন্তু মোমবাতি জ্বালানোর দায়িত্বটা আপনার।"
 
লিখলাম:
 
শিরোনাম: আমরা কি সত্যিই জাগছি?
 
"আজ আমার বোন কেঁদেছে। হিজাব পরার অপরাধে। আজ আমার বন্ধু তার শখের বাইক বেচতে চেয়েছে। আজ আমার বাবা তার শেষ সম্বল জমিটুকু দিতে চেয়েছেন।
 
এগুলো কি শুধুই আবেগ? না। এগুলো হলো জেগে ওঠার লক্ষণ। আমরা বুঝতে শুরু করেছি যে, এই পৃথিবীটা আমাদের আসল বাড়ি নয়। আমরা এখানে প্রবাসী। আর প্রবাসীরা কখনো বিদেশের মাটিতে প্রাসাদ বানায় না, তারা দেশে টাকা পাঠায়। আমাদের দেশ হলো জান্নাত। আমরা এখন জান্নাতে কারেন্সি পাঠাচ্ছি।
 
ওরা আমাদের মারছে, আমাদের অপমান করছে। কিন্তু ওরা জানে না, ওরা যত আঘাত করবে, আমরা তত বেশি খাঁটি হবো। লোহাকে আগুনে পোড়ালে তা ইস্পাত হয়। আমাদের ঈমান এখন ইস্পাত হওয়ার পথে।
 
শীতের রাত। বাইরে কুকুর ডাকছে। কিন্তু আমার কানে বাজছে বদরের যুদ্ধের দামামা। আমার কানে বাজছে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর ঘোড়ার খুরের শব্দ।
 
আমি একা নই। আমার সাথে আছে তানভীর, সাকিব, রিফাত, রাফিয়া, বাবা-মা। আমরা একটা কাফেলা। এই কাফেলা থামবে না। গন্তব্য হয়তো অনেক দূর, কিন্তু আমরা হাঁটা শুরু করেছি। আর যে হাঁটে, সে একদিন পৌঁছাবেই।"
 
কলমটা রেখে দিলাম। জানালার পর্দাটা সরিয়ে আকাশ দেখলাম। আজ আকাশ পরিষ্কার। অসংখ্য তারা। ঠিক যেন শহিদদের রুহ। তারা আমাদের দেখছে। তারা আমাদের ডাকছে।
 
"ভয় পেয়ো না হে মুসাফির, রাত তো হবেই পার,
ঈমান তোমার বুকের ভেতর, জ্বলন্ত এক ধার।
ছিঁড়বে শিকল, ভাঙবে কারা, দেখবে নতুন দিন,
শোধ হবে আজ রক্তে লেখা হাজারো সেই ঋণ।"
 
বিছানায় শুলাম। আজ আর ফ্লোরে নয়, বিছানাতেই শুলাম। কিন্তু শরীরটা বিছানায় থাকলেও মনটা পড়ে আছে আল-আকসার চত্বরে। আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি—আমি সেখানে নামাজ পড়ছি। আমার পাশে গাজার সেই শিশুটি, যার হাতে এখন আর ছেঁড়া কম্বল নেই, আছে বিজয়ের পতাকা।
 
ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু এই ঘুম গাফিলতির ঘুম নয়। এই ঘুম নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতির ঘুম। আগামী কাল শুক্রবার। জুমার দিন। নতুন পরিকল্পনা, নতুন উদ্যম।
 
রুহানিয়া কোনো গল্প নয়। এটা একটা লাইফস্টাইল। এটা একটা যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে আমরা হারব না ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের স্লোগান—"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"।
 
[রুহানিয়া]
[৬]
লেখা: Syed Mucksit Ahmed
Send as a message
Share on my page
Share in the group