সন্ধ্যা নামার ঠিক আগমুহূর্তে আকাশের রংটা কেমন যেন বিষণ্ন হয়ে যায়। ধূসর আর কমলার এক অদ্ভুত মিশেল। আমার ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা সেই সুরের রেশ এখনো কানে বাজছে। আজকের সন্ধ্যাটা অন্য দিনের মতো নয়। আজ আমি এক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা তরবারি নিয়ে নয়, আজ যুদ্ধ হবে যুক্তি, বুদ্ধি আর রুহানিয়াতের। আমার বন্ধু তানভীর আসবে। ওকে আমি দাওয়াত দিয়েছি। শুধু চায়ের দাওয়াত নয়, এটা আসলে ওর ঘুমন্ত বিবেককে জাগানোর এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
তানভীর আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। ও খারাপ মানুষ নয়। বরং দুনিয়াবি মানদণ্ডে ও একজন সফল এবং \'ভদ্র\' মানুষ। ভালো চাকরি, সুন্দর পরিবার, সামাজিক স্ট্যাটাস—সবই আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, ও সেই \'মডারেট\' ধোঁকাবাজির শিকার, যা আমাদের প্রজন্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। ও মনে করে ইসলাম হলো একটা কালচারাল অনুষ্ঠান। ঈদ এলে পাঞ্জাবি পরা আর জুমার দিনে আতর মাখাই ইসলামের সর্বোচ্চ সীমা। এর বাইরে ইসলামকে ও \'ব্যাকডেটেড\' মনে করে। আর ফিলিস্তিন? ওর কাছে ওটা শুধুই একটা আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম।
দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুললাম। তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা দামী মিষ্টির প্যাকেট। মুখে সেই চিরচেনা করপোরেট হাসি।
\"কী রে, তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি মেসেজটা দিয়ে! বললি কাবাব খাবি না, আবার বলছিস গরম কিছু শোনাবি। আমি তো ভাবলাম তুই সন্ন্যাসী হয়ে গেলি নাকি!\" তানভীর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ঠাট্টা করল।
আমি হাসলাম। ম্লান হাসি। \"সন্ন্যাসী হবো কেন? আমি তো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। সেটাই বা কম কিসে?\"
তানভীর সোফায় বসল। ঘরটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। আমার ড্রয়িংরুমের সেই বিশাল এলইডি টিভিটা আজ কাপড়ে ঢাকা। বুকশেলফ থেকে ধুলো ঝেড়ে ইসলামি বইগুলো সামনে এনে রেখেছি। তানভীরের ভুরু কুঁচকে গেল।
\"টিভি ঢাকা কেন? নষ্ট নাকি?\"
\"না, নষ্ট না। তবে ওটা চালু থাকলে আমরা নিজেদের কথা শুনতে পাই না। অন্যের শেখানো বুলি শুনতে থাকি। আজ আমরা নিজেদের কথা শুনব।\"
আমি চা বানিয়ে এনেছিলাম। সাথে কিছু বিস্কুট। মিষ্টির প্যাকেটটা খুললাম না। তানভীর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, \"তুই সিরিয়াসলি কিছু একটা নিয়ে ডিস্টার্বড। ওই জ্যাকেটের ব্যাপারটা এখনো মাথায় ঘুরছে? দেখ দোস্ত, চ্যারিটি করা ভালো। কিন্তু তাই বলে নিজের লাইফস্টাইল ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী হতে হবে, এটা ইসলাম বলে না।\"
আমি তানভীরের চোখের দিকে তাকালাম। \"তানভীর, ইসলাম সন্ন্যাসবাদ সমর্থন করে না, এটা সত্য। কিন্তু ইসলাম কি ভোগবাদ সমর্থন করে? এই যে তুই বলছিস লাইফস্টাইল, এই লাইফস্টাইলটা কে ঠিক করে দিয়েছে? পশ্চিমারা? ওরা আমাদের শিখিয়েছে—\'খরচ করো, তাহলেই তুমি সুখী।\' কিন্তু তুই কি সত্যি সুখী? তোর কি রাতে ঘুমের ওষুধ খেতে হয় না? তোর কি মাসের শেষে ইএমআই এর টেনশন থাকে না? তোর কি মনে হয় না, তুই একটা ইঁদুর দৌড়ের মধ্যে আছিস, যার কোনো শেষ নেই?\"
তানভীর একটু থমকে গেল। হয়তো আমার কথাগুলো ওর কোনো গোপন ক্ষততে আঘাত করেছে। ও বলল, \"সেটা তো মডার্ন লাইফের পার্ট। স্ট্রেস থাকবেই। তাই বলে কি সব ছেড়ে গুহায় চলে যাব?\"
\"গুহায় যেতে বলিনি। আমি বলছি, আমাদের প্রায়োরিটি বা অগ্রাধিকারের কথা। আজ গাজায় আমাদের ভাই-বোনেরা যখন এক টুকরো রুটির জন্য জীবন দিচ্ছে, তখন আমরা এখানে বসে কোন ব্র্যান্ডের পিজ্জা অর্ডার করব—সেটা নিয়ে ডিবেট করছি। এটা কি অসুস্থতা নয়? তুই বলছিলি ফিলিস্তিন নিয়ে আমরা কিছু করতে পারব না। কেন পারব না? আমাদের কি হাত-পা বাঁধা?\"
তানভীর চায়ের কাপটা টেবিলে রাখল। ওর ভঙ্গি এখন কিছুটা ডিফেন্সিভ। \"কী করবি তুই? ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবি? প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করবি? নাকি কোকাকোলা খাওয়া বাদ দিবি? তাতে ইসরায়েলের কী এসে যায়? ওদের ইকোনমি বিলিয়ন ডলারের। তোর এই দশ টাকার বর্জন ওদের লোমও ছিড়তে পারবে না। এগুলো ইমোশনাল বোকামি।\"
এটাই সেই যুক্তি, যা শয়তান আমাদের মগজে খুব শক্তভাবে গেঁথে দিয়েছে। আমি শান্ত গলায় বললাম, \"তানভীর, আবরাহার হস্তী বাহিনীর কথা মনে আছে? তারা যখন কাবা শরীফ ধ্বংস করতে এসেছিল, তখন তাদের মোকাবিলা করেছিল কারা? কোনো বিশাল সেনাবাহিনী? না। আবাবিল পাখি। ছোট্ট সব পাখি, ঠোঁটে ছোট্ট পাথর। ওই পাথরের কি ক্ষমতা ছিল হাতির পিঠের চামড়া ভেদ করার? ফিজিক্সের লজিক অনুযায়ী ছিল না। কিন্তু ওই পাথরের সাথে ছিল আল্লাহর হুকুম। আমরা যখন কোকাকোলা বা কেএফসি বর্জন করি, তখন আমরা আসলে ইসরায়েলের ইকোনমি ধসিয়ে দেওয়ার জন্য করি না। আমরা করি আমাদের \'ইজ্জত\' বা আত্মসম্মান বাঁচানোর জন্য। আমরা আল্লাহকে দেখাই—\'হে আল্লাহ! আমার সামর্থ্য এটুকুই ছিল। আমি জালিমের বুলেটের টাকা জোগান দিইনি।\' এটা একটা অবস্থান। এটা একটা স্টেটমেন্ট।\"
তানভীর তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, \"অবস্থান দিয়ে যুদ্ধ জয় হয় না। পাওয়ার লাগে। টেকনোলজি লাগে।\"
\"পাওয়ার তো আমাদের ছিল তানভীর। অটোমানদের পাওয়ার ছিল, আব্বাসীয়দের ছিল। কিন্তু যখন তারা ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দিল, তখন সেই পাওয়ার চলে গেল। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, \'তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করবেন।\' আমরা আল্লাহকে সাহায্য করা বন্ধ করে দিয়েছি, তাই আল্লাহও আমাদের সাহায্য তুলে নিয়েছেন। আমরা টেকনোলজির দোহাই দিচ্ছি, কিন্তু বদরের যুদ্ধে সাহাবীদের কি টেকনোলজি ছিল? ৩১৩ জন মানুষ, হাতে গোনা কয়েকটা তলোয়ার। আর বিপক্ষে হাজার খানেক সুসজ্জিত সৈন্য। লজিক কী বলে? সাহাবীদের কচুকাটা হওয়ার কথা। কিন্তু রেজাল্ট কী হলো? ফেরেশতারা নেমে এল। কেন? কারণ তাদের ঈমান ছিল নিখাদ। আর আমাদের ঈমানে ভেজাল। আমরা সকালে আল্লাহকে ডাকি, বিকেলে সুদের কারবার করি। আমাদের দুআ কি কবুল হবে?\"
তানভীর চুপ করে আছে। আমি উঠে গিয়ে বুকশেলফ থেকে একটা বই আনলাম। ইবনে কাসিরের ইতিহাস। একটা পাতা খুলে ধরলাম।
\"শোন, তাতাররা যখন বাগদাদ আক্রমণ করল, তখন বাগদাদের খলিফা ছিলেন মুসতাসিম বিল্লাহ। তার প্রাসাদে সোনা-দানার অভাব ছিল না। কিন্তু তিনি সৈন্যদের বেতন ঠিকমতো দিতেন না। বিলাসিতায় মগ্ন ছিলেন। তাতার নেতা হালাকু খান যখন তাকে বন্দি করল, তখন তাকে একটা শূন্য ঘরে আটকে রাখা হলো। সেই ঘরে শুধু সোনা আর হীরা-জহরত ছিল, কিন্তু কোনো খাবার বা পানি ছিল না। হালাকু খান বলল, \'তুমি তো অনেক সোনা জমিয়েছ। এখন এগুলো খাও।\' খলিফা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে করতে ওই সোনার স্তূপের ওপর মরে পড়ে রইলেন। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় তানভীর। আমরা এখন সেই বাগদাদের নাগরিকদের মতো। আমরা ভাবছি আমাদের টাকা, আমাদের আমেরিকা-প্রীতি আমাদের বাঁচাবে। কিন্তু যেদিন আল্লাহর গজব আসবে, সেদিন এই ক্রেডিট কার্ড আর পাসপোর্ট কোনো কাজে আসবে না।\"
তানভীরের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ও হয়তো কল্পনা করার চেষ্টা করছে দৃশ্যটা। আমি আবার বললাম, \"তুই গাজার নিউজ দেখিস না, আমি জানি। তোর খারাপ লাগে। কিন্তু ওই খারাপ লাগাটা জরুরি। ওটা তোর মৃতপ্রায় রুহটাকে ধাক্কা দেয়। গতকাল একটা ভিডিও দেখলাম। এক বাবা তার দুই সন্তানের লাশ দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। বাচ্চাগুলোর শরীর ক্ষতবিক্ষত। কিন্তু বাবাটা কাঁদছে না। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে বলছে, \'আলহামদুলিল্লাহ! আমার বাচ্চারা জান্নাতের পাখি হয়ে গেছে। আল্লাহ তুমি কবুল করো।\' তুই কল্পনা করতে পারিস তানভীর? কী লেভেলের ঈমান হলে মানুষ লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারে? আর তুই? গত সপ্তাহে তোর গাড়িতে একটা স্ক্র্যাচ পড়ল বলে তুই সারাদিন মেজাজ খারাপ করে রাখলি। ড্রাইভারকে গালি দিলি। তোর আর ওই গাজার বাবার মধ্যে তফাৎটা দেখ। সে সব হারিয়েও ধনী, আর তুই সব থেকেও ভিখারি।\"
তানভীর মাথা নিচু করল। ওর হাতের আঙুলগুলো কাঁপছে। ও হয়তো স্বীকার করতে চাইছে না, কিন্তু সত্যটা তীরের মতো বিঁধছে। কিছুক্ষণ পর ও ফিসফিস করে বলল, \"কিন্তু আমি কী করব? আমি তো সাধারণ মানুষ। আমি তো আর জিহাদে যেতে পারব না।\"
আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম। \"জিহাদ মানে শুধু তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করা নয়। জিহাদ মানে সংগ্রাম। নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তুই যদি আজ সিদ্ধান্ত নিস যে, তুই আর হারাম পথে টাকা কামাবি না—সেটা জিহাদ। তুই যদি সিদ্ধান্ত নিস যে, তুই ফিলিস্তিনের পণ্য বয়কট করবি—সেটা জিহাদ। তুই যদি ফজরের সময় আরামের ঘুম হারাম করে মসজিদে যাস—সেটা জিহাদ। আল্লাহ তোকে গাজা স্বাধীন করতে বলেননি, আল্লাহ তোকে জিজ্ঞেস করবেন—\'তুমি তোমার সাধ্যমতো কী করেছ?\'\"
তানভীর মুখ তুলল। ওর চোখে এখন আর সেই তাচ্ছিল্য নেই। আছে এক ধরনের অসহায়ত্ব। \"জানিস দোস্ত, মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় লাগে। মনে হয় আমি একটা মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। অফিসে এত পলিটিক্স, এত মিথ্যা কথা বলতে হয় ক্লায়েন্টদের সাথে... রাতে যখন বাড়ি ফিরি, নিজেকে খুব নোংরা মনে হয়। মনে হয়, এই জীবনটার কোনো মানে নেই। শুধু খাওয়া, পরা আর ঘুমানো। পশুর সাথে আমাদের তফাৎটা কী?\"
\"তফাৎটা হলো \'রুহ\' বা আত্মা। পশুর আত্মা নেই, আমাদের আছে। কিন্তু আমরা সেই আত্মাকে ক্ষুধার্ত রেখেছি। আমরা শরীরকে ফিড করছি বার্গার-পিজ্জা দিয়ে, কিন্তু আত্মাকে কুরআন বা জিকির দিয়ে ফিড করছি না। তাই আত্মাটা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। আর আত্মা যখন মরে যায়, তখন মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। সুইসাইড করতে চায়। কারণ তার অস্তিত্বের কোনো পারপাস থাকে না। তানভীর, ফিরে আয়। এখনো সময় আছে।\"
\"কীভাবে ফিরব? এত পাপ করেছি... আল্লাহ কি মাফ করবেন?\"
আমি মুচকি হাসলাম। \"শোন, কুরআনের একটা আয়াত বলি। আল্লাহ বলছেন, \'বলো, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন।\' আল্লাহ তো অপেক্ষায় আছেন। তিনি চান তুই ফিরে আয়। তুই এক পা বাড়ালে তিনি দশ পা এগিয়ে আসবেন। তুই হেঁটে গেলে তিনি দৌড়ে আসবেন। তোর মালিক তো এত দয়ালু!\"
তানভীরের চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। এই এক ফোঁটা পানি হয়তো সাগরের চেয়েও ভারী। কারণ এটা অনুশোচনার অশ্রু। জাহান্নামের আগুন নেভানোর জন্য এই এক ফোঁটা পানিই যথেষ্ট হতে পারে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দার দরজাটা খুলে দিলাম। ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঘরে ঢুকল।
\"তানভীর, চল বারান্দায় দাঁড়াই।\"
আমরা দুজনে বারান্দায় দাঁড়ালাম। নিচে শহরের আলো জ্বলছে। কোটি কোটি মানুষ। সবার নিজস্ব গল্প, নিজস্ব ব্যস্ততা।
\"ওই দেখ,\" আমি আকাশের দিকে আঙুল তুললাম। \"ওই আকাশের মালিক আর গাজার আকাশের মালিক একজনই। আমরা এখানে আরামে দাঁড়িয়ে আছি, আর ওখানে বোমাবর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু জানিস, কিয়ামতের দিন হয়তো ওই গাজাবাসীরাই আমাদের দেখে আফসোস করবে না, বরং আমরা তাদের দেখে আফসোস করব। তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে, আর আমাদের পাই-পাই করে হিসাব দিতে হবে—কেন আমরা নীরব ছিলাম? কেন আমরা আমাদের টাকার গরম দেখিয়েছি?\"
তানভীর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, \"তুই যে প্রজেক্টের কথা বলেছিলি... ওই যে নিজেকে বদলানোর... ওটা আমাকে দিবি? আমি ট্রাই করতে চাই। আমি জানি না পারব কি না, কিন্তু আমি আর এভাবে বাঁচতে চাই না। আমি শ্বাস নিতে পারছি না এই প্লাস্টিকের দুনিয়ায়।\"
আমার বুকটা ভরে গেল। আলহামদুলিল্লাহ। বরফ গলতে শুরু করেছে। আমি পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজটা বের করে ওর হাতে দিলাম। সেই চারটি পয়েন্টের তালিকা।
তানভীর কাগজটা হাতে নিয়ে মোবাইলের আলোয় পড়ল।
১. নিজেকে পরিবর্তন করা (পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কুরআন পাঠ)।
২. অপচয় এবং বিলাসিতা বর্জন (অপ্রয়োজনীয় শপিং বন্ধ)।
৩. জ্ঞান অর্জন (ইসলাম ও জিওপলিটিক্স)।
৪. মানুষকে সচেতন করা (দাওয়াহ)।
\"দ্বিতীয় পয়েন্টটা কঠিন,\" তানভীর বলল। \"আমার স্ত্রী... ও তো এসব মানবে না। ও তো প্রতি সপ্তাহে শপিংয়ে যেতে চায়।\"
\"শুরুটা তোকে করতে হবে। তুই যখন পরিবর্তন হবি, তখন তোর পরিবারের ওপর তার প্রভাব পড়বে। প্রথমে ঝড় আসবে, অশান্তি হবে। কিন্তু তুই যদি অটল থাকিস, আল্লাহ সাহায্য করবেন। হযরত আসিয়া (আ.) ফেরাউনের ঘরে থেকেও মুমিন ছিলেন। আর তুই তো তোর নিজের ঘরে। বুঝিয়ে বল। ভালোবাসা দিয়ে বল। আর সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহর কাছে দুআ কর। অন্তরের পরিবর্তন তো আল্লাহর হাতে।\"
তানভীর কাগজটা পকেটে ঢোকাল। \"আজ আমি উঠব। রাত হয়েছে।\"
\"দাঁড়া, একটা জিনিস নিয়ে যা।\"
আমি ভেতরের ঘর থেকে সেই নতুন কেনা নয়, বরং আমার খুব প্রিয় একটা আতরের শিশি নিয়ে এলাম। \"এটা রাখ। সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাহ। যখনই এটা মাখবি, মনে করবি এটা দুনিয়ার সুগন্ধি, জান্নাতের সুগন্ধি এর চেয়ে কোটি গুণ বেশি। আর সেই সুগন্ধি পেতে হলে একটু কষ্ট করতে হবে দোস্ত।\"
তানভীর আতরটা নিল। যাওয়ার সময় ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর আলিঙ্গনে আগের সেই আলগা ভাবটা নেই। এবার একটা শক্ত বাঁধন অনুভব করলাম। যেন ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরেছে।
\"দোয়া করিস আমার জন্য,\" তানভীর বলল। গলাটা ধরা।
\"অবশ্যই। আমরা একে অপরের আয়না। তোর ময়লা পরিষ্কার হলে আমার চেহারাই সুন্দর দেখাবে।\"
তানভীর চলে গেল। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শুনলাম। সিঁড়িতে তার পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে গেল। কিন্তু রেখে গেল এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
আমি আবার ঘরে ফিরে এলাম। চায়ের কাপগুলো পড়ে আছে। বিস্কুটগুলো খাওয়া হয়নি। কিন্তু আজ আমার পেট ভরা না থাকলেও মনটা ভরা। শয়তান আজ হেরে গেছে। অন্তত একটা রাউন্ডে।
রাত গভীর হচ্ছে। আমি ল্যাপটপটা আবার খুললাম। \'Project Awakening\' ফোল্ডারে নতুন একটা ফাইল খুললাম। নাম দিলাম—\"The Ripple Effect\" (ঢেউয়ের প্রভাব)।
পুকুরে একটা ঢিল ছুড়লে যেমন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি একজন মানুষের জাগরণ হাজার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তানভীর যদি বদলায়, ওর অফিসের কলিগরা দেখবে। ওর পরিবার দেখবে। হয়তো কেউ হাসবে, কেউ টিটকারি মারবে। কিন্তু কেউ কেউ ভাববে। ওই ভাবনাটাই আসল।
ইসলাম কোনো ম্যাজিক পিল নয় যে খেলাম আর সব ঠিক হয়ে গেল। ইসলাম হলো এক নিরন্তর সংগ্রাম। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটা। সবাই যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে না গিয়ে সত্যের দিকে যাওয়া।
মনে মনে একটা কবিতা আওড়াতে লাগলাম—
\"ঘুমিয়ে ছিলে মখমলে, ভুলে ছিলে পথ,
জাগল কি আজ বিবেকের রুদ্ধ মনোরথ?
ওরা মরে লাখে লাখে, তুমি আছো সুখে,
লজ্জা কি হয় না বলো, তাকাতে ওই মুখে?
এক হয়ে যাও উম্মাহ, ভাঙো ভয়ের বাঁধ,
আঁধার চিরে উঠবেই দেখো নতুন এক চাঁদ।\"
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। তানভীরের মেসেজ।
\"দোস্ত, গাড়িতে উঠে রেডিও অন করেছিলাম। গান বাজছিল। অফ করে দিলাম। এখন চুপচাপ ড্রাইভ করছি। এই নীরবতাটা ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আল্লাহ আমার সাথে আছেন। জ্যাকেটের ব্যাপারটা... আমি কালই দেখব আমার আলমারিতে কয়টা এক্সট্রা কাপড় আছে। ভালো থাকিস।\"
আমি মোবাইলটা বুকে চেপে ধরলাম। সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহ, তুমি কত মহান! তুমি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দাও। আমরা শুধুই ওসিলা।
কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এটা মাত্র শুরু। গাজার রক্ত এখনো ঝরছে। সুদানের, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাংলাদেশ—কোথায় নেই হাহাকার? আমাদের ব্যক্তিগত পরিবর্তনকে এবার সমষ্টিগত শক্তিতে রূপ দিতে হবে। আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেন আমরা পিছিয়ে পড়লাম? কেন আমাদের সম্পদ থাকার পরও আমরা ভিখারি? কেন আমাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার পরও আমরা ফেনার মতো ভেসে যাই?
রাসুল (সা.) বলেছিলেন, \"এমন এক সময় আসবে যখন অন্যান্য জাতি তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেমন ক্ষুধার্তরা খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।\" সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, \"আমরা কি তখন সংখ্যায় কম হব?\" রাসুল (সা.) বললেন, \"না, তোমরা তখন সংখ্যায় অনেক হবে। কিন্তু তোমরা হবে বন্যার ফেনার মতো। আর তোমাদের অন্তর থেকে শত্রুর ভয় দূর হয়ে যাবে এবং তোমাদের অন্তরে \'ওয়াহন\' ঢুকে যাবে।\" সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, \"\'ওয়াহন\' কী?\" তিনি বললেন, \"দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা আর মৃত্যুর প্রতি ভয়।\"
আজকের এই সন্ধ্যা আমাকে বুঝিয়ে দিল, এই \'ওয়াহন\' বা দুর্বলতা কাটানোর একমাত্র ওষুধ হলো ঈমানের নবায়ন। আমাদের মৃত্যুকে ভয় পাওয়া বন্ধ করতে হবে। মৃত্যু তো আসবই। কিন্তু ভীরুর মতো মরা আর বীরের মতো মরার মধ্যে তফাৎ আছে। বিছানায় শুয়ে মরার চেয়ে সত্যের পথে দাঁড়িয়ে মরা অনেক সম্মানের।
আমি জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দূরের মসজিদ থেকে এশার আজান ভেসে আসছে। \"হাইয়্যা আলাল ফালাহ\"—এসো কল্যাণের দিকে। পৃথিবীর সব কল্যাণ এখন ওই সিজদার মধ্যে। আমি আর দেরি করলাম না। ওজু করতে গেলাম। পানিটা এখনো ঠান্ডা। কিন্তু এখন আর সেটা কষ্ট মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এই পানি আমাকে প্রস্তুত করছে। এক নতুন যুদ্ধের জন্য। এক নতুন ভোরের জন্য।
যে ভোরের অপেক্ষায় আছে ফিলিস্তিন। যে ভোরের অপেক্ষায় আছে নির্যাতিত মানবতা। আর সেই ভোর আসবে আমাদের হাত ধরেই ইনশাআল্লাহ। আমরাই সেই আনসার, আমরাই সেই মুহাজির। শুধু সময়ের ব্যবধান।
[রুহানিয়া]
[৩]
লেখা: Syed Mucksit Ahmed
সন্ধ্যা নামার ঠিক আগমুহূর্তে আকাশের রংটা কেমন যেন বিষণ্ন হয়ে যায়। ধূসর আর কমলার এক অদ্ভুত মিশেল। আমার ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা সেই সুরের রেশ এখনো কানে বাজছে। আজকের সন্ধ্যাটা অন্য দিনের মতো নয়। আজ আমি এক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা তরবারি নিয়ে নয়, আজ যুদ্ধ হবে যুক্তি, বুদ্ধি আর রুহানিয়াতের। আমার বন্ধু তানভীর আসবে। ওকে আমি দাওয়াত দিয়েছি। শুধু চায়ের দাওয়াত নয়, এটা আসলে ওর ঘুমন্ত বিবেককে জাগানোর এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
তানভীর আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। ও খারাপ মানুষ নয়। বরং দুনিয়াবি মানদণ্ডে ও একজন সফল এবং 'ভদ্র' মানুষ। ভালো চাকরি, সুন্দর পরিবার, সামাজিক স্ট্যাটাস—সবই আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, ও সেই 'মডারেট' ধোঁকাবাজির শিকার, যা আমাদের প্রজন্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। ও মনে করে ইসলাম হলো একটা কালচারাল অনুষ্ঠান। ঈদ এলে পাঞ্জাবি পরা আর জুমার দিনে আতর মাখাই ইসলামের সর্বোচ্চ সীমা। এর বাইরে ইসলামকে ও 'ব্যাকডেটেড' মনে করে। আর ফিলিস্তিন? ওর কাছে ওটা শুধুই একটা আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম।
দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুললাম। তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা দামী মিষ্টির প্যাকেট। মুখে সেই চিরচেনা করপোরেট হাসি।
"কী রে, তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি মেসেজটা দিয়ে! বললি কাবাব খাবি না, আবার বলছিস গরম কিছু শোনাবি। আমি তো ভাবলাম তুই সন্ন্যাসী হয়ে গেলি নাকি!" তানভীর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ঠাট্টা করল।
আমি হাসলাম। ম্লান হাসি। "সন্ন্যাসী হবো কেন? আমি তো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। সেটাই বা কম কিসে?"
তানভীর সোফায় বসল। ঘরটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। আমার ড্রয়িংরুমের সেই বিশাল এলইডি টিভিটা আজ কাপড়ে ঢাকা। বুকশেলফ থেকে ধুলো ঝেড়ে ইসলামি বইগুলো সামনে এনে রেখেছি। তানভীরের ভুরু কুঁচকে গেল।
"টিভি ঢাকা কেন? নষ্ট নাকি?"
"না, নষ্ট না। তবে ওটা চালু থাকলে আমরা নিজেদের কথা শুনতে পাই না। অন্যের শেখানো বুলি শুনতে থাকি। আজ আমরা নিজেদের কথা শুনব।"
আমি চা বানিয়ে এনেছিলাম। সাথে কিছু বিস্কুট। মিষ্টির প্যাকেটটা খুললাম না। তানভীর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, "তুই সিরিয়াসলি কিছু একটা নিয়ে ডিস্টার্বড। ওই জ্যাকেটের ব্যাপারটা এখনো মাথায় ঘুরছে? দেখ দোস্ত, চ্যারিটি করা ভালো। কিন্তু তাই বলে নিজের লাইফস্টাইল ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী হতে হবে, এটা ইসলাম বলে না।"
আমি তানভীরের চোখের দিকে তাকালাম। "তানভীর, ইসলাম সন্ন্যাসবাদ সমর্থন করে না, এটা সত্য। কিন্তু ইসলাম কি ভোগবাদ সমর্থন করে? এই যে তুই বলছিস লাইফস্টাইল, এই লাইফস্টাইলটা কে ঠিক করে দিয়েছে? পশ্চিমারা? ওরা আমাদের শিখিয়েছে—'খরচ করো, তাহলেই তুমি সুখী।' কিন্তু তুই কি সত্যি সুখী? তোর কি রাতে ঘুমের ওষুধ খেতে হয় না? তোর কি মাসের শেষে ইএমআই এর টেনশন থাকে না? তোর কি মনে হয় না, তুই একটা ইঁদুর দৌড়ের মধ্যে আছিস, যার কোনো শেষ নেই?"
তানভীর একটু থমকে গেল। হয়তো আমার কথাগুলো ওর কোনো গোপন ক্ষততে আঘাত করেছে। ও বলল, "সেটা তো মডার্ন লাইফের পার্ট। স্ট্রেস থাকবেই। তাই বলে কি সব ছেড়ে গুহায় চলে যাব?"
"গুহায় যেতে বলিনি। আমি বলছি, আমাদের প্রায়োরিটি বা অগ্রাধিকারের কথা। আজ গাজায় আমাদের ভাই-বোনেরা যখন এক টুকরো রুটির জন্য জীবন দিচ্ছে, তখন আমরা এখানে বসে কোন ব্র্যান্ডের পিজ্জা অর্ডার করব—সেটা নিয়ে ডিবেট করছি। এটা কি অসুস্থতা নয়? তুই বলছিলি ফিলিস্তিন নিয়ে আমরা কিছু করতে পারব না। কেন পারব না? আমাদের কি হাত-পা বাঁধা?"
তানভীর চায়ের কাপটা টেবিলে রাখল। ওর ভঙ্গি এখন কিছুটা ডিফেন্সিভ। "কী করবি তুই? ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবি? প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করবি? নাকি কোকাকোলা খাওয়া বাদ দিবি? তাতে ইসরায়েলের কী এসে যায়? ওদের ইকোনমি বিলিয়ন ডলারের। তোর এই দশ টাকার বর্জন ওদের লোমও ছিড়তে পারবে না। এগুলো ইমোশনাল বোকামি।"
এটাই সেই যুক্তি, যা শয়তান আমাদের মগজে খুব শক্তভাবে গেঁথে দিয়েছে। আমি শান্ত গলায় বললাম, "তানভীর, আবরাহার হস্তী বাহিনীর কথা মনে আছে? তারা যখন কাবা শরীফ ধ্বংস করতে এসেছিল, তখন তাদের মোকাবিলা করেছিল কারা? কোনো বিশাল সেনাবাহিনী? না। আবাবিল পাখি। ছোট্ট সব পাখি, ঠোঁটে ছোট্ট পাথর। ওই পাথরের কি ক্ষমতা ছিল হাতির পিঠের চামড়া ভেদ করার? ফিজিক্সের লজিক অনুযায়ী ছিল না। কিন্তু ওই পাথরের সাথে ছিল আল্লাহর হুকুম। আমরা যখন কোকাকোলা বা কেএফসি বর্জন করি, তখন আমরা আসলে ইসরায়েলের ইকোনমি ধসিয়ে দেওয়ার জন্য করি না। আমরা করি আমাদের 'ইজ্জত' বা আত্মসম্মান বাঁচানোর জন্য। আমরা আল্লাহকে দেখাই—'হে আল্লাহ! আমার সামর্থ্য এটুকুই ছিল। আমি জালিমের বুলেটের টাকা জোগান দিইনি।' এটা একটা অবস্থান। এটা একটা স্টেটমেন্ট।"
তানভীর তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, "অবস্থান দিয়ে যুদ্ধ জয় হয় না। পাওয়ার লাগে। টেকনোলজি লাগে।"
"পাওয়ার তো আমাদের ছিল তানভীর। অটোমানদের পাওয়ার ছিল, আব্বাসীয়দের ছিল। কিন্তু যখন তারা ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দিল, তখন সেই পাওয়ার চলে গেল। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, 'তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করবেন।' আমরা আল্লাহকে সাহায্য করা বন্ধ করে দিয়েছি, তাই আল্লাহও আমাদের সাহায্য তুলে নিয়েছেন। আমরা টেকনোলজির দোহাই দিচ্ছি, কিন্তু বদরের যুদ্ধে সাহাবীদের কি টেকনোলজি ছিল? ৩১৩ জন মানুষ, হাতে গোনা কয়েকটা তলোয়ার। আর বিপক্ষে হাজার খানেক সুসজ্জিত সৈন্য। লজিক কী বলে? সাহাবীদের কচুকাটা হওয়ার কথা। কিন্তু রেজাল্ট কী হলো? ফেরেশতারা নেমে এল। কেন? কারণ তাদের ঈমান ছিল নিখাদ। আর আমাদের ঈমানে ভেজাল। আমরা সকালে আল্লাহকে ডাকি, বিকেলে সুদের কারবার করি। আমাদের দুআ কি কবুল হবে?"
তানভীর চুপ করে আছে। আমি উঠে গিয়ে বুকশেলফ থেকে একটা বই আনলাম। ইবনে কাসিরের ইতিহাস। একটা পাতা খুলে ধরলাম।
"শোন, তাতাররা যখন বাগদাদ আক্রমণ করল, তখন বাগদাদের খলিফা ছিলেন মুসতাসিম বিল্লাহ। তার প্রাসাদে সোনা-দানার অভাব ছিল না। কিন্তু তিনি সৈন্যদের বেতন ঠিকমতো দিতেন না। বিলাসিতায় মগ্ন ছিলেন। তাতার নেতা হালাকু খান যখন তাকে বন্দি করল, তখন তাকে একটা শূন্য ঘরে আটকে রাখা হলো। সেই ঘরে শুধু সোনা আর হীরা-জহরত ছিল, কিন্তু কোনো খাবার বা পানি ছিল না। হালাকু খান বলল, 'তুমি তো অনেক সোনা জমিয়েছ। এখন এগুলো খাও।' খলিফা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে করতে ওই সোনার স্তূপের ওপর মরে পড়ে রইলেন। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় তানভীর। আমরা এখন সেই বাগদাদের নাগরিকদের মতো। আমরা ভাবছি আমাদের টাকা, আমাদের আমেরিকা-প্রীতি আমাদের বাঁচাবে। কিন্তু যেদিন আল্লাহর গজব আসবে, সেদিন এই ক্রেডিট কার্ড আর পাসপোর্ট কোনো কাজে আসবে না।"
তানভীরের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ও হয়তো কল্পনা করার চেষ্টা করছে দৃশ্যটা। আমি আবার বললাম, "তুই গাজার নিউজ দেখিস না, আমি জানি। তোর খারাপ লাগে। কিন্তু ওই খারাপ লাগাটা জরুরি। ওটা তোর মৃতপ্রায় রুহটাকে ধাক্কা দেয়। গতকাল একটা ভিডিও দেখলাম। এক বাবা তার দুই সন্তানের লাশ দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। বাচ্চাগুলোর শরীর ক্ষতবিক্ষত। কিন্তু বাবাটা কাঁদছে না। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে বলছে, 'আলহামদুলিল্লাহ! আমার বাচ্চারা জান্নাতের পাখি হয়ে গেছে। আল্লাহ তুমি কবুল করো।' তুই কল্পনা করতে পারিস তানভীর? কী লেভেলের ঈমান হলে মানুষ লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারে? আর তুই? গত সপ্তাহে তোর গাড়িতে একটা স্ক্র্যাচ পড়ল বলে তুই সারাদিন মেজাজ খারাপ করে রাখলি। ড্রাইভারকে গালি দিলি। তোর আর ওই গাজার বাবার মধ্যে তফাৎটা দেখ। সে সব হারিয়েও ধনী, আর তুই সব থেকেও ভিখারি।"
তানভীর মাথা নিচু করল। ওর হাতের আঙুলগুলো কাঁপছে। ও হয়তো স্বীকার করতে চাইছে না, কিন্তু সত্যটা তীরের মতো বিঁধছে। কিছুক্ষণ পর ও ফিসফিস করে বলল, "কিন্তু আমি কী করব? আমি তো সাধারণ মানুষ। আমি তো আর জিহাদে যেতে পারব না।"
আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম। "জিহাদ মানে শুধু তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করা নয়। জিহাদ মানে সংগ্রাম। নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তুই যদি আজ সিদ্ধান্ত নিস যে, তুই আর হারাম পথে টাকা কামাবি না—সেটা জিহাদ। তুই যদি সিদ্ধান্ত নিস যে, তুই ফিলিস্তিনের পণ্য বয়কট করবি—সেটা জিহাদ। তুই যদি ফজরের সময় আরামের ঘুম হারাম করে মসজিদে যাস—সেটা জিহাদ। আল্লাহ তোকে গাজা স্বাধীন করতে বলেননি, আল্লাহ তোকে জিজ্ঞেস করবেন—'তুমি তোমার সাধ্যমতো কী করেছ?'"
তানভীর মুখ তুলল। ওর চোখে এখন আর সেই তাচ্ছিল্য নেই। আছে এক ধরনের অসহায়ত্ব। "জানিস দোস্ত, মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় লাগে। মনে হয় আমি একটা মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। অফিসে এত পলিটিক্স, এত মিথ্যা কথা বলতে হয় ক্লায়েন্টদের সাথে... রাতে যখন বাড়ি ফিরি, নিজেকে খুব নোংরা মনে হয়। মনে হয়, এই জীবনটার কোনো মানে নেই। শুধু খাওয়া, পরা আর ঘুমানো। পশুর সাথে আমাদের তফাৎটা কী?"
"তফাৎটা হলো 'রুহ' বা আত্মা। পশুর আত্মা নেই, আমাদের আছে। কিন্তু আমরা সেই আত্মাকে ক্ষুধার্ত রেখেছি। আমরা শরীরকে ফিড করছি বার্গার-পিজ্জা দিয়ে, কিন্তু আত্মাকে কুরআন বা জিকির দিয়ে ফিড করছি না। তাই আত্মাটা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। আর আত্মা যখন মরে যায়, তখন মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। সুইসাইড করতে চায়। কারণ তার অস্তিত্বের কোনো পারপাস থাকে না। তানভীর, ফিরে আয়। এখনো সময় আছে।"
"কীভাবে ফিরব? এত পাপ করেছি... আল্লাহ কি মাফ করবেন?"
আমি মুচকি হাসলাম। "শোন, কুরআনের একটা আয়াত বলি। আল্লাহ বলছেন, 'বলো, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন।' আল্লাহ তো অপেক্ষায় আছেন। তিনি চান তুই ফিরে আয়। তুই এক পা বাড়ালে তিনি দশ পা এগিয়ে আসবেন। তুই হেঁটে গেলে তিনি দৌড়ে আসবেন। তোর মালিক তো এত দয়ালু!"
তানভীরের চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। এই এক ফোঁটা পানি হয়তো সাগরের চেয়েও ভারী। কারণ এটা অনুশোচনার অশ্রু। জাহান্নামের আগুন নেভানোর জন্য এই এক ফোঁটা পানিই যথেষ্ট হতে পারে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দার দরজাটা খুলে দিলাম। ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঘরে ঢুকল।
"তানভীর, চল বারান্দায় দাঁড়াই।"
আমরা দুজনে বারান্দায় দাঁড়ালাম। নিচে শহরের আলো জ্বলছে। কোটি কোটি মানুষ। সবার নিজস্ব গল্প, নিজস্ব ব্যস্ততা।
"ওই দেখ," আমি আকাশের দিকে আঙুল তুললাম। "ওই আকাশের মালিক আর গাজার আকাশের মালিক একজনই। আমরা এখানে আরামে দাঁড়িয়ে আছি, আর ওখানে বোমাবর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু জানিস, কিয়ামতের দিন হয়তো ওই গাজাবাসীরাই আমাদের দেখে আফসোস করবে না, বরং আমরা তাদের দেখে আফসোস করব। তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে, আর আমাদের পাই-পাই করে হিসাব দিতে হবে—কেন আমরা নীরব ছিলাম? কেন আমরা আমাদের টাকার গরম দেখিয়েছি?"
তানভীর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, "তুই যে প্রজেক্টের কথা বলেছিলি... ওই যে নিজেকে বদলানোর... ওটা আমাকে দিবি? আমি ট্রাই করতে চাই। আমি জানি না পারব কি না, কিন্তু আমি আর এভাবে বাঁচতে চাই না। আমি শ্বাস নিতে পারছি না এই প্লাস্টিকের দুনিয়ায়।"
আমার বুকটা ভরে গেল। আলহামদুলিল্লাহ। বরফ গলতে শুরু করেছে। আমি পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজটা বের করে ওর হাতে দিলাম। সেই চারটি পয়েন্টের তালিকা।
তানভীর কাগজটা হাতে নিয়ে মোবাইলের আলোয় পড়ল।
১. নিজেকে পরিবর্তন করা (পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কুরআন পাঠ)।
২. অপচয় এবং বিলাসিতা বর্জন (অপ্রয়োজনীয় শপিং বন্ধ)।
৩. জ্ঞান অর্জন (ইসলাম ও জিওপলিটিক্স)।
৪. মানুষকে সচেতন করা (দাওয়াহ)।
"দ্বিতীয় পয়েন্টটা কঠিন," তানভীর বলল। "আমার স্ত্রী... ও তো এসব মানবে না। ও তো প্রতি সপ্তাহে শপিংয়ে যেতে চায়।"
"শুরুটা তোকে করতে হবে। তুই যখন পরিবর্তন হবি, তখন তোর পরিবারের ওপর তার প্রভাব পড়বে। প্রথমে ঝড় আসবে, অশান্তি হবে। কিন্তু তুই যদি অটল থাকিস, আল্লাহ সাহায্য করবেন। হযরত আসিয়া (আ.) ফেরাউনের ঘরে থেকেও মুমিন ছিলেন। আর তুই তো তোর নিজের ঘরে। বুঝিয়ে বল। ভালোবাসা দিয়ে বল। আর সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহর কাছে দুআ কর। অন্তরের পরিবর্তন তো আল্লাহর হাতে।"
তানভীর কাগজটা পকেটে ঢোকাল। "আজ আমি উঠব। রাত হয়েছে।"
"দাঁড়া, একটা জিনিস নিয়ে যা।"
আমি ভেতরের ঘর থেকে সেই নতুন কেনা নয়, বরং আমার খুব প্রিয় একটা আতরের শিশি নিয়ে এলাম। "এটা রাখ। সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাহ। যখনই এটা মাখবি, মনে করবি এটা দুনিয়ার সুগন্ধি, জান্নাতের সুগন্ধি এর চেয়ে কোটি গুণ বেশি। আর সেই সুগন্ধি পেতে হলে একটু কষ্ট করতে হবে দোস্ত।"
তানভীর আতরটা নিল। যাওয়ার সময় ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর আলিঙ্গনে আগের সেই আলগা ভাবটা নেই। এবার একটা শক্ত বাঁধন অনুভব করলাম। যেন ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরেছে।
"দোয়া করিস আমার জন্য," তানভীর বলল। গলাটা ধরা।
"অবশ্যই। আমরা একে অপরের আয়না। তোর ময়লা পরিষ্কার হলে আমার চেহারাই সুন্দর দেখাবে।"
তানভীর চলে গেল। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শুনলাম। সিঁড়িতে তার পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে গেল। কিন্তু রেখে গেল এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
আমি আবার ঘরে ফিরে এলাম। চায়ের কাপগুলো পড়ে আছে। বিস্কুটগুলো খাওয়া হয়নি। কিন্তু আজ আমার পেট ভরা না থাকলেও মনটা ভরা। শয়তান আজ হেরে গেছে। অন্তত একটা রাউন্ডে।
রাত গভীর হচ্ছে। আমি ল্যাপটপটা আবার খুললাম। 'Project Awakening' ফোল্ডারে নতুন একটা ফাইল খুললাম। নাম দিলাম—"The Ripple Effect" (ঢেউয়ের প্রভাব)।
পুকুরে একটা ঢিল ছুড়লে যেমন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি একজন মানুষের জাগরণ হাজার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তানভীর যদি বদলায়, ওর অফিসের কলিগরা দেখবে। ওর পরিবার দেখবে। হয়তো কেউ হাসবে, কেউ টিটকারি মারবে। কিন্তু কেউ কেউ ভাববে। ওই ভাবনাটাই আসল।
ইসলাম কোনো ম্যাজিক পিল নয় যে খেলাম আর সব ঠিক হয়ে গেল। ইসলাম হলো এক নিরন্তর সংগ্রাম। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটা। সবাই যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে না গিয়ে সত্যের দিকে যাওয়া।
মনে মনে একটা কবিতা আওড়াতে লাগলাম—
"ঘুমিয়ে ছিলে মখমলে, ভুলে ছিলে পথ,
জাগল কি আজ বিবেকের রুদ্ধ মনোরথ?
ওরা মরে লাখে লাখে, তুমি আছো সুখে,
লজ্জা কি হয় না বলো, তাকাতে ওই মুখে?
এক হয়ে যাও উম্মাহ, ভাঙো ভয়ের বাঁধ,
আঁধার চিরে উঠবেই দেখো নতুন এক চাঁদ।"
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। তানভীরের মেসেজ।
"দোস্ত, গাড়িতে উঠে রেডিও অন করেছিলাম। গান বাজছিল। অফ করে দিলাম। এখন চুপচাপ ড্রাইভ করছি। এই নীরবতাটা ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আল্লাহ আমার সাথে আছেন। জ্যাকেটের ব্যাপারটা... আমি কালই দেখব আমার আলমারিতে কয়টা এক্সট্রা কাপড় আছে। ভালো থাকিস।"
আমি মোবাইলটা বুকে চেপে ধরলাম। সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহ, তুমি কত মহান! তুমি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দাও। আমরা শুধুই ওসিলা।
কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এটা মাত্র শুরু। গাজার রক্ত এখনো ঝরছে। সুদানের, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাংলাদেশ—কোথায় নেই হাহাকার? আমাদের ব্যক্তিগত পরিবর্তনকে এবার সমষ্টিগত শক্তিতে রূপ দিতে হবে। আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেন আমরা পিছিয়ে পড়লাম? কেন আমাদের সম্পদ থাকার পরও আমরা ভিখারি? কেন আমাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার পরও আমরা ফেনার মতো ভেসে যাই?
রাসুল (সা.) বলেছিলেন, "এমন এক সময় আসবে যখন অন্যান্য জাতি তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেমন ক্ষুধার্তরা খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।" সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, "আমরা কি তখন সংখ্যায় কম হব?" রাসুল (সা.) বললেন, "না, তোমরা তখন সংখ্যায় অনেক হবে। কিন্তু তোমরা হবে বন্যার ফেনার মতো। আর তোমাদের অন্তর থেকে শত্রুর ভয় দূর হয়ে যাবে এবং তোমাদের অন্তরে 'ওয়াহন' ঢুকে যাবে।" সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, "'ওয়াহন' কী?" তিনি বললেন, "দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা আর মৃত্যুর প্রতি ভয়।"
আজকের এই সন্ধ্যা আমাকে বুঝিয়ে দিল, এই 'ওয়াহন' বা দুর্বলতা কাটানোর একমাত্র ওষুধ হলো ঈমানের নবায়ন। আমাদের মৃত্যুকে ভয় পাওয়া বন্ধ করতে হবে। মৃত্যু তো আসবই। কিন্তু ভীরুর মতো মরা আর বীরের মতো মরার মধ্যে তফাৎ আছে। বিছানায় শুয়ে মরার চেয়ে সত্যের পথে দাঁড়িয়ে মরা অনেক সম্মানের।
আমি জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দূরের মসজিদ থেকে এশার আজান ভেসে আসছে। "হাইয়্যা আলাল ফালাহ"—এসো কল্যাণের দিকে। পৃথিবীর সব কল্যাণ এখন ওই সিজদার মধ্যে। আমি আর দেরি করলাম না। ওজু করতে গেলাম। পানিটা এখনো ঠান্ডা। কিন্তু এখন আর সেটা কষ্ট মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এই পানি আমাকে প্রস্তুত করছে। এক নতুন যুদ্ধের জন্য। এক নতুন ভোরের জন্য।
যে ভোরের অপেক্ষায় আছে ফিলিস্তিন। যে ভোরের অপেক্ষায় আছে নির্যাতিত মানবতা। আর সেই ভোর আসবে আমাদের হাত ধরেই ইনশাআল্লাহ। আমরাই সেই আনসার, আমরাই সেই মুহাজির। শুধু সময়ের ব্যবধান।
[রুহানিয়া]
[৩]
লেখা: Syed Mucksit Ahmed
Comment
Share
Send as a message
Share on my page
Share in the group