Translation is not possible.
একটু ভাবুন তো, এই মুহূর্তে আপনি যে শ্বাসটি নিচ্ছেন, বুকের পাঁজরের ভেতর যে হৃৎপিণ্ডটি লাব-ডাব ছন্দে বিরামহীন রক্ত পাম্প করে যাচ্ছে, সেটি কার হুকুমে চলছে?
আপনি হয়তো বলবেন, এটা তো বায়োলজিক্যাল প্রসেস, বিজ্ঞান। কিন্তু এই নিখুঁত বিজ্ঞানের পেছনের কারিগরটি কে?
আপনি যখন আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করছেন, কিংবা যে ব্যক্তি স্রষ্টাকে নিয়ে নোংরা উপহাস করছে তার পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন, তখন ঠিক সেই মুহূর্তটিতে আপনার মস্তিষ্কের নিউরনগুলোতে যে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে, তা কার দেওয়া শক্তি?
বড় অদ্ভুত এই মানুষ! যার দেওয়া জিহ্বা নাড়াচাড়া করে শব্দ তৈরি করছেন, সেই জিহ্বা দিয়েই তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করছেন, তাঁকে অপমান করছেন। অথচ তিনি চাইলে ঠিক সেই মুহূর্তেই আপনার বাকশক্তি হরণ করে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন না। তিনি ছাড় দেন। আর এই ছাড় দেওয়াকে মানুষ নিজের বিজয় মনে করে। কি ভয়ানক বিভ্রান্তি!
​আপনি কার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন? কার পক্ষে সাফাই গাইছেন?
একটু জানালার পাশে গিয়ে আকাশের দিকে তাকান। এই বিশাল আকাশ, এই নক্ষত্ররাজি, এই মহাজাগতিক শূন্যতা—সবই তো তাঁর। আপনি যে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন, সেই মাটি তো তাঁরই সৃষ্টি। অভিকর্ষ বল দিয়ে তিনি আপনাকে পৃথিবীর বুকে আটকে রেখেছেন। তিনি যদি মুহূর্তের জন্য এই বল সরিয়ে নেন, আপনি মহাশূন্যে ছিটকে পড়বেন।
আবার তিনি যদি অভিকর্ষ একটু বাড়িয়ে দেন, মাটির সাথে মিশে চ্যাপ্টা হয়ে যাবেন। যেই ফ্লোরে দাঁড়িয়ে, যেই কীবোর্ডে আঙ্গুল চালিয়ে আপনি রবের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, সেই আঙ্গুলের স্নায়ুতন্ত্রের মালিকও তো তিনি।
ভাবুন তো, আপনি কার রাজত্বে বসে কার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন? এ তো এমন এক নিমকহারামি, যার কোনো তুলনা পৃথিবীর অভিধানে নেই। যেন কারও দস্তরখানে বসে পেট ভরে খেয়ে, শেষে সেই দস্তরখানেই থুথু ছিটানো। কিন্তু মনে রাখবেন, থুথু আকাশের দিকে ছিটালে তা নিজের মুখেই এসে পড়ে।
​স্রষ্টাকে নিয়ে যারা ঠাট্টা করে, তাদের পক্ষে যারা যুক্তি খোঁজে, তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছে। তারা মনে করে, আল্লাহ হয়তো তাদের দেখছেন না, কিংবা তাদের এই আস্ফালনে আল্লাহর সম্মান কমে যাচ্ছে। কী হাস্যকর!
এক গ্লাস পানি থেকে এক ফোঁটা পানি তুলে নিলে সাগরের যেমন কিছু আসে যায় না, তেমনি সমগ্র সৃষ্টিজগৎ মিলে আল্লাহকে অস্বীকার করলেও তাঁর প্রতাপে অণু পরিমাণ ঘাটতি হয় না। কিন্তু ক্ষতিটা কার? ক্ষতিটা আপনার।
আপনি যখন সূর্যের দিকে ধুলোবালি ছুঁড়বেন, সূর্য মলিন হবে না, ধুলোবালি আপনার চোখেই এসে পড়বে। আল্লাহ কুরআনে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "মানুষ কি মনে করে তাকে অনর্থক ছেড়ে দেওয়া হবে?" (সূরা আল-কিয়ামাহ: ৩৬)।
অর্থাৎ, এই যে স্বাধীনতা, এই যে কথা বলার ক্ষমতা, এই যে হাত-পা নাড়ানোর শক্তি—এসব কি এমনি এমনি? কোনো জবাবদিহিতা নেই?
​যারা কটূক্তিকারীর পক্ষ নেন, তারা প্রায়ই 'বাকস্বাধীনতা' বা 'মুক্তচিন্তা'র দোহাই দেন। কিন্তু মুক্তচিন্তা মানে কি সত্যকে অস্বীকার করা? মুক্তচিন্তা মানে কি নিজের শেকড় কেটে ফেলা?
আপনি যখন হাসপাতালে অক্সিজেন মাস্ক পরে শুয়ে থাকেন, তখন এক সিলিন্ডার অক্সিজেনের জন্য হাজার হাজার টাকা গুনতে হয়। আর সারাটা জীবন যিনি আপনাকে বিনে পয়সায় অফুরন্ত অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলেন, সেই মহান দাতার বিরুদ্ধে কথা বলতে আপনার বিবেকে বাধে না?
উল্টো যারা তাঁকে গালি দেয়, আপনি তাদের বাহবা দেন! এটাকে কি মুক্তচিন্তা বলে, নাকি অকৃতজ্ঞতার চূড়ান্ত সীমা?
একটু ভেবে দেখুন, আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কেউ যদি কুরুচিপূর্ণ কথা বলে, আপনি কি তার পক্ষ নেবেন? আপনি কি বলবেন, "আহা, ওর বলার স্বাধীনতা আছে"? নিশ্চয়ই না। আপনার রক্ত গরম হয়ে উঠবে।
অথচ যিনি আপনাকে আপনার বাবা-মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন, যিনি আপনাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন, তাঁকে নিয়ে কটূক্তি করা হলে আপনার রক্ত ঠান্ডা থাকে কী করে? বরং আপনি কটূক্তিকারীর হয়ে তর্কে লিপ্ত হন।
এর মানে হলো, আপনার হৃদয়ের ফিতরাত বা স্বভাবজাত ধর্ম মরে গেছে। ভাইরাসে আক্রান্ত কম্পিউটারের মতো আপনার ভেতরটাও করাপ্টেড হয়ে গেছে।
​আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। এই বাক্যটি বড়ই ওজস্বী। কুরআনের ভাষায় একে বলা হয় 'ইস্তিদরাজ' বা ঢিল দেওয়া। আল্লাহ জালিমদের রশি লম্বা করে দেন। তাদের ধন-সম্পদ বাড়ে, খ্যাতি বাড়ে, তাদের অনুসারী বাড়ে। তারা মনে করে, "কই, কিছুই তো হলো না! আমি তো বেশ আছি।" কিন্তু এটাই হলো আল্লাহর সবচেয়ে বড় ফাঁদ। তিনি তাদের পাপের বোঝা পূর্ণ হওয়ার সুযোগ দেন।
আল্লাহ বলেন, "আমি তাদের সময় দিচ্ছি; নিশ্চয়ই আমার কৌশল অত্যন্ত শক্তিশালী।" (সূরা আল-আরাফ: ১৮৩)।
ফেরাউন কি নিজেকে খোদা দাবি করেনি? নমরুদ কি আসমানে তীর ছোঁড়েনি? তাদের পরিণতি কী হয়েছিল? ফেরাউনকে আল্লাহ পানিতে ডুবিয়ে মারলেন, আর নমরুদকে সামান্য এক মশার কাছে পরাজিত করলেন।
ইতিহাস সাক্ষী, যারা আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তারা ধুলোয় মিশে গেছে। তাদের নাম আজ ঘৃণা ভরে স্মরণ করা হয়। আজকের যারা মডার্ন ফেরাউন বা নমরুদ সেজে স্রষ্টাকে অপমান করছে, তাদের পরিণতিও ভিন্ন হবে না। হয়তো আজ তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজারটা লাইক-শেয়ার পাচ্ছে, কিন্তু মহাকালের বিচারে তারা আবর্জনার স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
​যে ব্যক্তি কটূক্তিকারীর পক্ষে কথা বলে, সে নিজেকে ওই অপরাধের অংশীদার বানিয়ে ফেলে। হাদিসে এসেছে, কেউ যদি কোনো পাপ কাজের সমর্থন করে বা তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তবে সে-ও সেই পাপের অংশীদার।
ভাবুন তো, কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনে, যখন সূর্য মাথার খুব কাছে থাকবে, যখন মানুষ 'ইয়া নফসি, ইয়া নফসি' করবে, তখন আপনি কার দলে থাকবেন? সেই কটূক্তিকারীর দলে? সেদিন আল্লাহ যদি আপনাকে প্রশ্ন করেন, "আমার দেওয়া রিজিক খেয়ে, আমার দেওয়া পৃথিবীতে বাস করে, আমারই দুশমনদের সাথে তুমি কেন হাত মিলিয়েছিলে?" তখন কী জবাব দেবেন? তখন কি আপনার সেই তথাকথিত 'লজিক' বা 'ফিলোসফি' কোনো কাজে আসবে?
সেদিন তো মুখে তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। হাত কথা বলবে, পা সাক্ষ্য দেবে। যে হাত দিয়ে আপনি কটূক্তিকারীর সমর্থনে স্ট্যাটাস লিখেছিলেন, সেই হাত আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। যে চোখ দিয়ে আপনি সেই নোংরা লেখাগুলো পড়ে পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছিলেন, সেই চোখ আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। পালাবেন কোথায়? ডানে, বামে, সামনে, পেছনে—সব তো তাঁর রাজত্ব।
​অনেকে বলে, "আল্লাহ তো দয়ালু, তিনি কি এত ছোটখাটো কথায় ধরবেন?" দেখুন, আল্লাহ অবশ্যই পরম দয়ালু (আর-রাহমান), কিন্তু তিনি একই সাথে কঠোর শাস্তিদাতাও (শাদিদ আল-ইক্বাব)। তিনি তাঁর দয়াকে তাদের জন্য রেখেছেন যারা অনুতপ্ত হয়, যারা ফিরে আসে। কিন্তু যারা অহংকার করে, যারা জেনেশুনে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে এবং স্রষ্টার সম্মানহানি করে, তাদের জন্য তাঁর দয়া নয়, বরং তাঁর ন্যায়বিচার অপেক্ষা করছে।
আর আল্লাহর ন্যায়বিচার পাপীদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। আপনি যদি আগুনের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেন এবং আশা করেন আগুন আপনাকে পোড়াবে না কারণ আগুন খুব 'সুন্দর', তবে সেটা আপনার বোকামি। আগুনের ধর্ম পোড়ানো। ঠিক তেমনি, কুফরি এবং আল্লাহকে নিয়ে উপহাসের পরিণতি হলো ধ্বংস। এটা মহাজাগতিক নিয়ম।
​বাস্তবতার দিকে তাকান। একটা সামান্য ভাইরাসের কাছে পুরো পৃথিবী যখন অসহায় হয়ে পড়ে, তখন মানুষের অহংকার কোথায় থাকে? যেই বিজ্ঞান নিয়ে আপনারা বড়াই করেন, সেই বিজ্ঞানও তো আল্লাহর সৃষ্টি করা নিয়ম-নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা নতুন কিছু সৃষ্টি করেন না, তারা কেবল আল্লাহর সৃষ্টি করা বিদ্যমান সূত্রগুলোকে আবিষ্কার করেন মাত্র। নিউটন অভিকর্ষ আবিষ্কার করেছেন, সৃষ্টি করেননি। অভিকর্ষ আগে থেকেই ছিল, কারণ আল্লাহ তা রেখেছিলেন।
তাই বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে স্রষ্টাকে অপমান করাটা হলো নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করা। যে মস্তিষ্ক খাটিয়ে আপনি নাস্তিকতার যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, সেই মস্তিষ্কের কোটি কোটি কোষের নিয়ন্ত্রণ কি আপনার হাতে? রাতে ঘুমানোর পর আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস কে চালু রাখে? আপনি কি অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন যে, "সকাল পর্যন্ত আমার হার্টবিট যেন চলে"? না। এই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে, যাঁকে আপনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন।
​আমাদের সমাজের একটা বড় সমস্যা হলো 'হুজুগেপনা'। একজন আল্লাহকে গালি দিল, আর কিছু মানুষ তাকে 'বুদ্ধিজীবী', 'সাহসী' বা 'বিপ্লবী' তকমা দিয়ে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করল। তারা ভাবে, স্রোতের বিপরীতে চলাই বুঝি স্মার্টনেস।
কিন্তু স্রোত যদি হয় সত্যের, আর আপনি যদি হাঁটেন মিথ্যার পথে, তবে সেটা স্মার্টনেস নয়, সেটা হলো আত্মহনন। পয়োনিষ্কাশনের নালায় সাঁতার কেটে নিজেকে সাহসী দাবি করা যায় না, ওটাকে নোংরামো বলে।
আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করা কোনো সাহসিকতা নয়, এটা হলো মানসিক বিকৃতি এবং রুচিহীনতা। আর এই বিকৃত রুচির মানুষদের যারা সমর্থন দেয়, তাদের রুচি নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত।
​মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। আপনি আস্তিক হোন বা নাস্তিক, মৃত্যুর স্বাদ আপনাকে পেতেই হবে। মৃত্যু যখন শিয়রে এসে দাঁড়াবে, তখন এই পৃথিবী, এই বন্ধু-বান্ধব, এই লাইক-কমেন্ট, এই বাহাদুরি—সব মরীচিকার মতো মিলিয়ে যাবে। সেই মুহূর্তটির কথা ভাবুন। যখন রুহটা শরীর থেকে টেনে বের করা হবে। কবরের সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
যেখানে কোনো ফিলোজফার বা মোটিভেশনাল স্পিকার আপনাকে বাঁচাতে যাবে না। সেখানে শুধু আপনি আর আপনার আমল। যদি দুনিয়ায় আল্লাহর দুশমনদের বন্ধু বানিয়ে থাকেন, তবে সেই কবরের জীবন হবে বিভীষিকাময়। মাটি চাপ দিয়ে পাঁজরের হাড় এক করে ফেলবে। তখন চিৎকার করে বলবেন, "হে আল্লাহ! আমাকে আরেকবার সুযোগ দাও! আমি বিশ্বাসী হয়ে ফিরে আসব।"
কিন্তু তখন আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। কুরআনে আল্লাহ এই দৃশ্যটি আগেই বলে দিয়েছেন, যাতে আমরা সতর্ক হই। সূরা আল-মুমিনুনে তিনি বলেন, "যখন তাদের করো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব! আমাকে পুনরায় (দুনিয়ায়) প্রেরণ করুন, যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকাজ করতে পারি। না, এটা হবার নয়! এটা তো তার একটি কথার কথা মাত্র..."
​আমাদের জীবনটা একটা পরীক্ষার হল। এখানে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে (কুরআন), শিক্ষক পাঠানো হয়েছে (রাসূল সা.), এবং সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে (হায়াত)। এখন আপনি যদি পরীক্ষার হলে বসে খাতা ছিঁড়ে ফেলেন, শিক্ষকদের গালি দেন এবং প্রশ্নপত্র নিয়ে মশকরা করেন, তবে পরীক্ষার রেজাল্ট কী হবে তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
আর যে ছাত্রটি এসব করছে, আপনি যদি তার পক্ষ নিয়ে বলেন, "ওর খাতা ছিঁড়ার অধিকার আছে", তবে প্রিন্সিপাল কি আপনাকেই বা ছাড় দেবেন? দুনিয়ার সামান্য স্কুলেই যদি বেয়াদবির শাস্তি টিসি হয়, তবে মহাবিশ্বের মালিকের দরবারে বেয়াদবির শাস্তি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা কল্পনারও অতীত।
​আল্লাহর ধৈর্যকে দুর্বলতা ভাববেন না। তিনি নুহা (আ.)-এর জাতিকে সময় দিয়েছিলেন সাড়ে নয়শ বছর। কিন্তু যখন তারা সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন প্লাবন দিয়ে ধুয়েমুছে সাফ করে দিলেন। লুত (আ.)-এর কওমকে তিনি ছাড় দিয়েছিলেন, কিন্তু যখন তারা পাপাচারের চরম সীমায় পৌঁছাল, জনপদকে উল্টে দিলেন।
আদ ও সামুদ জাতির শক্তিমত্তা আজকের সুপারপাওয়ার দেশগুলোর চেয়েও বেশি ছিল। তারা পাহাড় কেটে বাড়ি বানাত। কিন্তু তাদের পরিণতি কী হয়েছে? আজ তাদের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের দেখার বিষয় মাত্র। এই ইতিহাসগুলো কি শুধুই গল্প?
না, এগুলো সতর্কবার্তা। আল্লাহ বারবার বলছেন, "তোমরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করো না? তবে দেখ, মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি কী হয়েছে?"
​যিনি আপনাকে এক ফোঁটা নাপাক পানি থেকে সৃষ্টি করে আজকের এই সুঠাম দেহের অধিকারী করেছেন, তাঁর প্রতি এই অবজ্ঞা কেন?
আপনার চোখের লেন্স, রেটিনা, কর্নিয়া—কি এক অবিশ্বাস্য ইঞ্জিনিয়ারিং! মানুষের তৈরি ক্যামেরা আজ পর্যন্ত চোখের মতো ডায়নামিক রেঞ্জ বা ফোকাসিং ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এই চোখ দিয়ে আপনি আল্লাহর কুদরত না দেখে, অশ্লীলতা আর কুফরি দেখছেন?
আপনার কানের ভেতরের হাড়গুলো, যা শব্দের কম্পনকে মস্তিষ্কে পৌঁছে দিচ্ছে, তা কি এমনি এমনি হয়েছে? এই নিখুঁত ডিজাইনের পেছনে কি কোনো ডিজাইনার নেই?
একটা সামান্য মোবাইল ফোন যদি আপনা-আপনি তৈরি না হতে পারে, তবে এই অকল্পনীয় জটিল মহাবিশ্ব এবং মানবদেহ কি কোনো স্রষ্টা ছাড়া তৈরি হয়েছে?
এই সহজ সত্যটা যে বোঝে না, সে আসলে অন্ধ। আর যে জেনে-বুঝে অস্বীকার করে, সে হলো অহংকারী। আর অহংকার একমাত্র আল্লাহর চাদর। যে সেই চাদর ধরে টান দেয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।
​যারা কটূক্তিকারীর পক্ষে যায়, তারা মূলত শয়তানের দোসর। শয়তান মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয়, "এটাই আধুনিকতা, এটাই প্রগতি।" কিন্তু শয়তান তো নিজেই অভিশপ্ত। সে চায় বনী আদমকেও তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যেতে। কুরআনে শয়তানের চ্যালেঞ্জের কথা বলা আছে, সে বলেছিল, "আমি তাদের ধোঁকা দেব, তাদের পথভ্রষ্ট করব।" আপনি কি শয়তানের সেই চ্যালেঞ্জ জিতিয়ে দিচ্ছেন না? আপনি কি নিজের অজান্তেই শয়তানের দাবার ঘুঁটি হয়ে যাচ্ছেন না? একটু আত্মোপলব্ধি করুন। ফিরে আসুন নিজের বিবেকের কাছে।
​আল্লাহর দয়া কিন্তু এখনো আপনার জন্য উন্মুক্ত। যতদিন নিঃশ্বাস আছে, ততদিন তওবার দরজা খোলা। যারা অতীতে আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছে বা কটূক্তিকারীর পক্ষ নিয়েছে, তারা যদি আজই অনুতপ্ত হয়ে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন।
কারণ তিনি 'গফুরুর রাহিম'। তিনি বলেছেন, "হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন।" (সূরা আয-যুমার: ৫৩)। কি
চমৎকার আহ্বান! যেই রবকে আপনি গালি দিলেন, সেই রবই আপনাকে ডাকছেন ক্ষমার চাদর তলে। এমন দয়ালু মালিক আর কোথায় পাবেন? কটূক্তিকারীর পক্ষে গিয়ে আপনি কার কাছে যাবেন? তাদের কি ক্ষমতা আছে আপনাকে মাফ করার? তাদের কি ক্ষমতা আছে আপনার মৃত্যু যন্ত্রণা লাঘব করার? তাদের কি ক্ষমতা আছে কবরের আজাব থেকে আপনাকে বাঁচানোর? নেই। কারো নেই। ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।
​তাই আসুন, স্রোতের বিপরীতে গা ভাসিয়ে নিজের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস না করি। তথাকথিত 'কুল' বা 'স্মার্ট' হতে গিয়ে ঈমান বিক্রি না করি। মনে রাখবেন, এই পৃথিবীটা একটা ট্রানজিট লাউঞ্জ মাত্র। আসল গন্তব্য সামনে। সেখানে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাবেন নাকি রিমান্ডে যাবেন, তা নির্ভর করছে এই অল্প কয়দিনের আচরণের ওপর।
আল্লাহকে ভালোবাসুন, তাঁকে ভয় করুন। তাঁর সৃষ্টিকে সম্মান করুন। যারা স্রষ্টাকে অপমান করে, তাদের ঘৃণা করুন—ব্যক্তিকে নয়, তাদের কাজকে। তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করুন, কিন্তু ভুলেও তাদের পাপের সমর্থন করবেন না। কারণ, আগুনের পাশে থাকলে আগুনের আঁচ আপনার গায়েও লাগবে।
​এই আকাশ, এই বাতাস, এই মাটি—সবই সাক্ষ্য দেবে একদিন। যেই মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনি ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন, সেই মাটিই সেদিন আপনার বিরুদ্ধে কথা বলবে। যেই চামড়া দিয়ে আপনি পাপ করেছেন, সেই চামড়া আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। তখন পালানোর কোনো জায়গা থাকবে না। একমাত্র আল্লাহর রহমত ছাড়া সেদিন বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না।
তাই সময় থাকতেই সাবধান হোন। ফিরে আসুন রবের দিকে। সেজদায় লুটিয়ে পড়ুন। বলুন, "হে আমার রব! আমি ভুল করেছি, আমাকে ক্ষমা করো।" বিশ্বাস করুন, এই একটি বাক্যে আপনার জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং দ্বীনের পথে অটল রাখুন। আমিন।
[কার রাজত্বে বিদ্রোহ?]
লেখা: Syed Mucksit Ahmed
image
Send as a message
Share on my page
Share in the group