আসসালামুআলাইকুম।
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি কেউ আমার কথায় কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন, কথাগুলো সেসব মুসলিমদের জন্য যারা ধৈর্য ধরে পড়তে পারেন।
মিউজিক-গান-বাজনা এখন আমরা এমনভাবে জীবনের অংশ করে নিয়েছি যেন এটা ছাড়া চলা মুশকিল। জিম করতে গান লাগে, ফুটপাথে হাঁটতে গান লাগে, গাড়ি-বাইক চালাতে গান লাগে, গোসল করতে গান লাগে, ঘুমের জন্য গান লাগে… কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে কী এই গান শুনাটাকে স্বাভাবিক ভাবা উচিৎ? যদি ভাবি, তাহলে কেন আযান দিলে গান বন্ধ করেন? কেন মসজিদে গান চলেনা, মোবাইল বন্ধ রাখতে বলা হয়? তবুও অনেকেই মসজিদে মোবাইলটা সাইলেন্ট রাখেনা, নামাজের মাঝেও গান বাজে!
আল্লাহ বলেন,
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشْتَرِى لَهْوَ ٱلْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۢ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌۭ مُّهِينٌۭ ٦
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।”
সূরা লুকমান: ৬
এখানে এই ‘বেহুদা কথা’ আসলে কী?
তাফসির ঘাটলেই পাবেন যে নাদর ইবনে হারিসের একটি বিশেষ ঘটনার কারণে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি মক্কার মুশরিকদের মধ্যে একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী ছিলেন যারা ব্যবসার জন্য বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। একবার তিনি ইরান থেকে সাইরাস এবং অন্যান্য পারস্য রাজাদের সমন্বিত ঐতিহাসিক গল্পের একটি সংগ্রহ কিনে নিয়ে আসেন। এইভাবে সশস্ত্র হয়ে তিনি মক্কার কুরাইশদের বললেন: "মুহাম্মদ তোমাদেরকে আদ ও সামুদ এবং অন্যান্যদের গল্প শোনাচ্ছেন। আমি তোমাদেরকে আরও ভালো গল্প বলব, রুস্তম, ইসফান্দিয়ার এবং পারস্যের অন্যান্য রাজাদের গল্প।” তারা শুনতে লাগলো। তার গল্পগুলো শুধু এই কারণে যে সেগুলোতে কিছু শেখার মতো কাজ ছিল না এবং কিছু ‘সুস্বাদু’ গল্প ছিল না। এটি চুরি করে, কোরান থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটি অজুহাত খুঁজে পেয়েছে।
এবং আদ-দুর আল-মান্থুর গ্রন্থে সাইয়্যিদনা ইবনে আব্বাস (রা) এর একটি বর্ণনা অনুসারে, উপরে উল্লেখিত ব্যবসায়ী একটি গায়ক দাসীকে বিদেশে এনেছিলেন। তার মাধ্যমেই তিনি মানুষকে কুরআন শোনা থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন। যখন তিনি কাউকে কুরআন শোনার ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন তিনি তাকে তার দাসনীকে তার সামনে গান শোনাতেন। তিনি বলতেন: 'মুহাম্মদ' আপনাকে কুরআন শোনাতে বাধ্য করেন, তারপরে আপনাকে নামাজ ও রোজা রাখতে বলেন যা আপনার জীবনকে কঠিন করে তোলে। আসুন, আপনি এই গান শুনুন এবং মজা উপভোগ করুন।'
এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে স্পষ্ট গানের কথা তো বলা নেই। গান শুনলেও নামাজ তো পড়াই হয়, আল্লাহকে তো স্মরণ করিই!
তাহলে বলেন তো এই গান যে গায়করা গায় তাদের এতো গুনগান করেন কেন? কেন তাদের কন্সার্টের টিকেট এতো টাকা দিয়ে কিনেন(কন্সার্টে কারা যায়, কী কী হয়- এসব নিয়ে সবাই জানেন আশা করি)?
আপনাদের এই ‘ক্রেইজ’-এর ব্যাখা আল্লাহ অনেক আগেই করেছেন,
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌۭ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۢ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ ١٨
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ نَسُوا۟ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمْ أَنفُسَهُمْ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ ١٩
لَا يَسْتَوِىٓ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ وَأَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ ۚ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ هُمُ ٱلْفَآئِزُونَ ٢٠
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; প্রত্যেকেই ভাবিয়া দেখুক আগামী কল্যের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠাইয়াছে। আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অবহিত। আর তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা আল্লাহ্কে ভুলিয়া গিয়াছে ; ফলে আল্লাহ্ উহাদেরকে আত্মবিস্মৃত করিয়াছেন। উহারাই তো পাপাচারী। জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।”
সূরা আল-হাশর: ১৮-২০
وَ مَنۡ یَّعۡشُ عَنۡ ذِکۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَیِّضۡ لَهٗ شَیۡطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِیۡنٌ ﴿۳۶﴾
“আর যে পরম করুণাময়ের যিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী।”
সূরা আয-যুখরুফ: ৩৬
এখন আপনারাই মন থেকে বলেন তো যে গান-বাজনা আল্লাহ-র স্মরণ থেকে মানুষকে দূরে রাখেনা? হারামকে হালাল মনে করা কোন সময়ের আলামত সেই সম্পর্কে আশা করি সবাই জানেন।
“আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ’আরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে।”
সহীহ বুখারী: ৭৪/৬-পানীয়: ৫৫৯০
আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন। আশা করি যারা আরও জানতে চান, তারা এই ব্যাপারে আরও পড়াশোনা করবেন। যারা নামাজ মসজিদে আদায় করেন, মোবাইলটা বন্ধ বা সাইলেন্ট করে রাখবেন।
ধন্যবাদ।